পাইকগাছায় রসায়ন শাস্ত্রের পথিকৃৎ বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র ( পিসি) রায় এর বসতবাড়ী সংস্কার করে পর্যটন স্পট, সব সম্পতি সরকারী করণ,মা-বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণের দাবি উঠেছে। ২ আগস্ট দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে বিজ্ঞানীর ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী’র আলোচনা সভায় বক্তারা এসব দাবি উর্থাপন করেন।
এ উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জেলা- উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পিসি রায় স্মৃতি সংসদ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাড়ুলীতে বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে পিসি রায় যাদুঘরসহ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এর পর আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দ বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা-কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
খৃলনা জেলা প্রশাসন আয়োজিত জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি’র বক্তব্য রাখেন খুলনা-৬ আসনের এমপি মোঃ রশীদুজ্জামান। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন।
উপ-সচিব ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার সুশান্ত কুমার সরকার-পিপিএম, প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনন্দ মোহন বিশ্বাস, সহকারী কমিশনার ভূমি ইফতেখারুল ইসলাম শামিম,সেলিম জাহাঙ্গীর, পিসি রায স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাহদৎ হোসেন বাচ্চু,ওসি মোঃ ওবাইদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অনিতা রানী মন্ডল ও আঃ ওহাব বাবলু, ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, আঃ রাজ্জাক মলঙ্গী ও মজিদ গোলদার, অধ্যক্ষ সমরেশ রায়, হাবিবুল্লাহ বাহার,উৎপল বাইন,গোপাল চন্দ্র ঘোষ । সহকারী অধ্যাপক ময়নুল ইসলামের সঞ্চালনায়
এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শংকর দেবনাথ, ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাস, আঃ হাকিম গোলদার,উত্তম কুমার দাশসহ জনপ্রতিনিধি,মুক্তিযোদ্ধা,পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র ( পিসি) রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে রাডুলীতে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা জমিদার হরিশচন্দ্র রায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন একাধারে ছিলেন বাঙালি রসায়নবিদ,বিজ্ঞান শিক্ষক, দার্শনিক,দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, কবি, রাজনীতিবিদ,সমাজ সংস্কারক ও সমবায় আন্দোলনের পূরোধা।
পিসি রায় ১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে। সেখান থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন।
তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় ২৭ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। মাত্র ৮ শত টাকা পূঁজি নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা করেন। বেঙ্গল কেমিক্যাল ১৯০১ সালে কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। তাঁর ওই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তিনি মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।
১৯৩০ সালে বৃিটিশ সরকার তাকে’ নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান সূচক ডক্টরেট ড্রিগ্রী প্রদান করেন। পিসি রায় ১৯০৯ সালে জন্মভূমি রাড়ুলীতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালে শিক্ষা বিস্তারে পিতার নামে আর,কে, বি, কে, হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী এ প্রতিষ্ঠানটি স্কুল এ্যাড কলেজে রুপান্তরিত হয়েছে। দেশে প্রথম তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারে রাড়ুলীতে মায়ের নামে ভূবন মোহনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাগেরহাটে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পি সি রায় কলেজ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করে খ্যাতি অর্জন করেন। চির কুমার বিজ্ঞানী তার সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ মানব কল্যানে দান করে গেছেন। ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে বিজ্ঞানী অনন্তলোকে যাত্রা করেন।