বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধিঃ
প্রতিনিধি প্রজনন মৌসুমেও চলছে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার। এতে বনের গহীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। আর জেলে নামক এক শ্রেণীর দূবৃর্ত্তদের এ কাজে সহযোগীতা করছেন বনবিভাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে মাছ ধরা পাশ পারমিট বন্দ রাখা শুধু কাগজ কলমে সীমাবন্ধ থাকছে।সূত্রে জানা গেছে, সুন্দবনের ৩১ শতাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে জলাভূমি। জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে ৪৫০টি নদ—নদী। এই নদীতে রয়েছে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ। এর মধ্যে ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়াসহ অসংখ্য জলজ প্রানী। সরকার প্রতি বৎসর প্রাকৃতিক এই মৎস্য সম্পদ থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করে থাকেন। বর্তমান সুন্দরবনে চলছে মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুম।
এ জন্য জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস বনে মাছ শিকার এবং জেলেদের পাশ পারমিট বন্দ রয়েছে। কিন্তু কিছু জেলে নামক দূবৃর্ত্তরা কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফার আশায় অবৈধ ভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করছেন। আর বনের অভ্যন্তরে প্রতিটি খালে ও নদীতে পরিবেশ বিধ্বংসী বিষ প্রয়োগে করছেন মাছ শিকার। এমনকি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত নিষিদ্ধ খালেও। তাদের এ কাজে প্রতিরোধ না করে আর্থিক চুক্তিতে সহযোগীতা করছেন বনবিভাগের দূর্নীতিবাজ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বন সংলগ্ন এলাকার ঐ দূর্বৃত্তদের সঙ্গে কথিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর গভীর সখ্যতা এবং সহায়তার ফলে মাছের প্রজনন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে মধ্য ভাটার সময় খালের গোড়ায় জাল পেতে খালের আগায় বিষ দেওয়া হয়। কিছুক্ষনের মধ্যে মাছগুলো ছটফট করতে করতে দূর্বল হয়ে ভাসতে ভাসতে জালে এসে আটকা পড়ে। এ কাজে সাধারণত ভারতীয় অবৈধ রিপকট, ক্যারাটে, হিলডন, ওস্তাদ ও বিষ পাউডারসহ বিভিন্ন বিষ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে একদিকে যেমন বনের গহীনে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে।
অন্যদিকে বিষ মিশ্রিত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের নানা বন্য প্রানীও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। আবার ঐ বিষ মিশ্রিত মাছ খেয়ে জনসাধারণ পেটের পীড়াসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানে দুই একজন দূবৃর্ত্ত বিষসহ হাতে নাতে আটক হলেও কখনো নেমে নেই এ কাজ। আর এতে মহা বিপাকে পড়েছেন বৈধ ভাবে মাছ শিকার করে এমন সব জেলেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলেরা জানান, প্রতি অমাবস্যা ও পূর্নিমার গোনে নৌকা প্রতি উৎকোচ নিয়ে এ কাজে সহযোগীতা করেন বনবিভাগের দূর্নীতিবাজ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা মহাসিন আলী বলেন, কিছুদিন আগে গাঁগড়ামারি এলাকা থেকে বিষ দেওয়া ৪০ কেজি চাকা চিংড়ি জব্দ করা হয়।
এঘটনায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। চিংড়িগুলো পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মাটিতে পুতে রাখা হয়। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায় জানান, সুন্দরবন এবং বনের জীব বৈচিত্র রক্ষা করতে হলে প্রথমে বনের বিভিন্ন নদী, খাল এবং নিষিদ্ধ এলাকায় বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্দো করতে হবে। এ ছাড়াও বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী শিকারও। অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে যে সব জেলে জড়িত তাদের কঠোর ভাবে বনে নিষিদ্ধ করতে হবে। আর ওই অবৈধ শিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে সুন্দরবনের পরিবেশ ফিরে আসবে এবং বনের জীব বৈচিত্র রক্ষা পাবে।এবিষয়ে খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, বঙ্গবসাগর তথা সুন্দরবনের বিভিন্ন মাছ দক্ষিণাঞ্চলের জনসাধারণের আমিষের চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু প্রজনন মৌসুমে যদি বিষ অথবা সাধারণ ভাবেও মাছ শিকার করা হয় তাহলে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হয়। ফলে প্রজনন মৌসুমে মৎস্য অধিদপ্তর, বনবিভাগ, কোষ্টগার্ড ও নৌপুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করলে সুন্দরবনে মাছ শিকার বন্দ হবে এবং প্রাকৃতিক এই মৎস্য ভান্ডার রক্ষা হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বাগেরহাট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম জানান, প্রজনন মৌসুমে এ পর্যন্ত বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারসহ বনে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি মামলা হয়েছে। এঘটনায় মোট ৫০ থেকে ৬০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে কিছু সিআর মামলায় জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকিদের মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। এ ছাড়া যে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এর সঙে জড়িত প্রমান পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA