• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন

×

সুন্দরবনের ঢাংমারী ষ্টেশন অনিয়ম দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্যের আখড়া

  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪
  • ৭৩ পড়েছেন
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ঢাংমারী ষ্টেশনে লাগামহীন দুর্নীতি অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। বনজ দ্রব্য আহরণের জন্য নতুন বিএলসি নবায়ন ও মাছ ধরার পাশ পারমিট বাবদ মোটা অংকের ঘুষ আদায়, নিষিদ্ধ সময় ও অভয়াশ্রমে মাছ ধরার সুযোগ, গোলপাতা মৌসুমে বাওয়ালীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, সাম্প্রতিক সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত বনের পুকুর ও অন্যান্য স্থাপনা মেরামত বাবদ ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ষ্টেশনের এসও (ষ্টেশন অফিসার) ফরেষ্টার মোহসীন আলী নেপথ্যে থেকে এসব অনিয়ম দুর্নীতি আর উৎকোচ বাণিজ্য করছেন বলে ভূক্তভোগীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন ঢাংমারী ষ্টেশনের অবস্থান। এ ষ্টেশনের অধীন লাউডোব, ঘাগরামারী, ঝাপসি ও জোংড়া নামক বন বিভাগের ৪টি ক্যাম্প (ফাঁড়ি) রয়েছে। এ ৪টি ক্যাম্পের ইনচার্জ হলো ঢাংমারী ষ্টেশনের এসও। সুন্দরবনের এ ষ্টেশনটি বনরক্ষীদের কাছে অনেকটা লোভনীয়। এখানে পোষ্টিং পাওয়া অনেকটা সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে অনেকে মনে করেন।
জেলে বাওয়ালীদের অভিযোগ, প্রায় বছর খানেক আগে এ ষ্টেশনে এসও (ষ্টেশন কর্মকর্তা) হিসেবে ফরেষ্টার মোহসীন আলী যোগদান করার পরই জেলে বাওয়ালীদের উপর ব্যাপক জুলুম ও উৎকোচ বাণিজ্যে নেমে পড়েন। তার যোগদানের পর পরই সুন্দরবনে মাছ ধরার পাশাপাশি বনজ দ্রব্য আহরণের মৌসুম শুরু হয়। মৌসুমের শুরুতে তিনি জেলেদের পাশ পারমিট (মাছ ধরার অনুমতি) প্রদানের নামে সরকার নির্ধারিত ফির পাশাপাশি অতিরিক্ত কয়েকগুন ঘুষ আদায় করতে শুরু করেন। এরপর গোলপাতা মৌসুম শুরু হলে তিনি বাওয়ালীদের কাছ থেকে বেপরোয়াভাবে অতিরিক্ত কয়েকগুন টাকা ঘুষ হিসেবে আদায় করেন। এ সময় তাকে একটি গোলপাতা কূপের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি সেখান থেকেও বাওয়ালীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন।
সূত্র জানায়, গত জুন মাস থেকে ৩ মাসের জন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ ধরাসহ সব ধরনের বনজ দ্রব্য আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় জুলাই মাস থেকে জেলে বাওয়ালীদের বনজ দ্রব্য আহরণের জন্য নতুন বিএলসি (নৌযানের লাইসেন্স সনদ) ও নবায়ন শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত এ ষ্টেশনে ৪৩০টি বিএলনি নবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে ৬৮টি বিএলসি দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে বিএলসি নবায়নের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ ষ্টেশনে চলছে লাগামহীন ঘুষ বাণিজ্য। সরকারী নিয়মানুযায়ী প্রতি ১ কুইন্টাল ধারণ ক্ষমতা নৌকার অনুকুলে প্রতি বিএলসি নবায়নে ১০ টাকার সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়ার কথা। অথচ এ ষ্টেশনে বিএলসি নবায়নে নেয়া হচ্ছে কুইন্টাল প্রতি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা করে। মাছ ধরার জেলেরা সাধারণত ২০ কুইন্টাল ধারণ ক্ষমতার মধ্যেই বিএলসি নবায়ন করে থাকে। সেখানে জেলেদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।  আর নতুন বিএলসির ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে। বর্তমানে বিলম্ব ফি দিয়ে বিএলসি নবায়ন চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলে জানান, অতিরিক্ত টাকা না দিলে বিএলসি নবায়ন বা নতুন বিএলসি দেয়া হয় না। উল্টো বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানীর ভয়ভীতি দিয়ে এসব ঘুষের টাকা আদায় করা হয়। যে কারনে তারা কোন উর্দ্ধতন মহলে জানাতেও সাহস পান না।
এসব ছাড়াও বর্তমান এসও এ ষ্টেশনের আওতাধীন অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ খালে এক শ্রেণির অসাধু জেলেদের মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে মাছ ধরার সুযোগ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বন রক্ষীদের ম্যানেজ করে অভয়ারণ্যর পাশাপাশি নিষিদ্ধ সময়ে বনের খালের অভ্যন্তরে গোপনে মাছ ধরে আরেক শ্রেণির জেলে।
সাম্প্রতিক সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় রিমালে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানের মতো ঢাংমারী ষ্টেশনের সুপেয় পানির পুকুর ডুবে লবণ পানি প্রবেশসহ কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তিতে ওই পুকুরের পানি সেচে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামতের নামে সরকারী বরাদ্দের মোটা অংকের টাকা এসও মোহসীন আলী দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মোহসীন আলী তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, বিএলসি নবানয়, পাশ পারমিট প্রদান ও গোলপাতা আহরণে কোন অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না। যা নিয়মে আছে তাই নেওয়া হয়। এক শ্রেণীর জেলে বাওয়ালী আছে তারা অবৈধ সুযোগ নিতে চায়। সুযোগ না দিলে তারা এসব বদনাম করতে থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে তিনি জড়িত নন।
এব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম ও চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবের বক্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তারা রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA