বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ অপরাহ্ন
মো. আরিফুর রহমান:
সরকার পতনের পর খুলনার বিভিন্ন এলাকার ছোট—বড় শপিংমল ও মার্কেট খোলা শুরু হলেও দোকান মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি পুরোপুরি। সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। চারদিকে লুট তরাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং রাঘব বোয়ালদের ঋণ কেলেঙ্কারির খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাংকগুলোর ওপর ব্যবসায়ীদের অনাস্থা তৈরী হয়। যার বিরুপ প্রভাব ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে। পাশাপাশি পন্য পরিবহন খাতেও এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
খুলনার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে এ চিত্র পাওয়া যায়। খুলনার পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ করে সরকার পতনের পর কিছুটা আতঙ্কিত লাগছিলো। চারদিকে লুটতরাজ শুরু হয়ে গিয়েছিলো। নগদ টাকা লেনদেনে একরকম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাথে বাজারে ক্রেতা সংকট এখনো চলছে। নতুন করে কাপড় আমদানি বন্ধ করেছি। কারন মানুষ কেউই বাজারে টাকা ছাড়তে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় চার—পাঁচ লক্ষ টাকা লেনদেন করতাম, তা কমে দাড়িয়েছে ৫০—৬০ হাজার টাকায়। ব্যাংকে এখন কেউ লেনদেন করতে চাচ্ছে না সহজে। তবে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে বলে তিনি আশা করেন। ফলের পাইকারি ব্যবসায়ী আজমল গাজী জানান, ফলের দাম বেড়েছে। এতো দামে কেউ ফল কিনতে চাচ্ছে না। তাই গুদামজাত কমিয়েছি। ব্যাংকের টাকা তুলে নিয়েছি। কখন কোন ব্যাংক বন্ধ হবে কেউ তো আগে থেকে ঘোষনা দেয় না। বুঝব কী করে? তিনি আরো জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফল আমদানি করে গুদাম জাত করে পুনরায় পাইকারি ব্যবসা ফুল দমে শুরু করবেন।
ইলেক্ট্রনিক্স পন্য ডিলার কাইয়ুম শেখ বলেন, এমনিতেই ঈদ—কোরবানি ছাড়া আমাদের এ ব্যভসা তেমন একটা ভালো হয় না। আর সরকার পতনের পর সব কিছু স্থবির। ব্যবসা একদম বন্ধ হয়ে আছে। এ মাসে চালানের টাকা দিয়েই কর্মচারীদের বেতন দেয়া লাগতে পারে। তিনি প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যাংকে লেনদেন তো করব, বানিজ্য হলে। সেই ব্যবসা আর বানিজ্যই তো বন্ধ। তবে গচ্ছিত টাকা ব্যাংক থেকে তোলেননি বলে জানান। কার্গো ব্যবসায়ী তমাল কাজী বলেন, আমরা নদী পথে পন্য আনা—নেওয়া করি। একে তো বর্ষাকাল। নদীর অবস্থা ভালো না। তাই ইট—বালি সরবরাহ কমেছে। আর পন্য পরিবহন হচ্ছে তবে ১৫—২০ দিন ধরে একটু কমে গেছে। ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী সোহাগ শেখ বলেন, জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় থেকেই পরিবহন মালিকরা পরিবহনের ক্ষতির ঝঁুকির কারনে ব্যবসা একটু কমিয়েছিলো। ফলে পন্য পরিবহনও কমেছিলো সে সময়ে। তবে সরকার পতনের পর এমনিতেই পন্য পরিবহন স্থবির হয়ে আছে। ব্যবসায়ীরা পন্য আমদানি— রপ্তানি কম করছেন বিধায় আমাদের ব্যবসাও কমেছে।
খুলনার ব্যবসায়ী নেতারা জানান, সরকার পতনের পর সব জায়গাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে, সাথে ব্যাংক বন্ধ হওয়ার খবরও ছড়িয়েছে। যার কারনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক ব্যবসায়ীরা তাদের গচ্ছিত টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিয়েছেন। যার কারনে সব দিকেই একটা সংকট বিরাজ করছে। কিন্তু বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাংক এবং আইন—শৃঙ্খলা পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলে এ সংকট কাটতে সময়ই লাগবে না।পরিবহন শ্রমকি নেতারা জানান, পরিবহন সেক্টরের সাথে অনেক মানুষের জীবিকা জড়িত। দেশে কোন গন্ডগোল হলে পরিবহন সেক্টরকে অনেক ভোগ পোহাতে হয়।
সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে তারা বলেন, এ সেক্টর পন্য পরিবহনে অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাই এ সেক্টরের নিরাপত্তা সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA