মোঃ শহীদুল হাসান :
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) দখল নিচ্ছে সংখ্যালঘু পরিবারের মাথা গোঁজার শেষ জমিটুকু। শেষ সম্বলটুকু হারানোর শংকায় দিন কাটছে সংখ্যালঘু পরিবারটির। নগরীর শিববাড়ী পালপাড়া রোড এলাকায় সংখ্যালঘু পরিবারের সাথে এ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনা স্বীকার করলেও জমি বুঝিয়ে দেয়নি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত জমিতে নকসা দেয়ায় বিপাকে পড়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, নগরীর শীববাড়ি এলাকায় সংখ্যালঘু দেবাশীষ কুমার পালের পালপাড়া রোডে পৈতৃক সিএস ১৬৮ নং খতিয়ানের ১৫১৭নং দাগ ২৩ শতক জমি। এর মধ্য থেকে ১৯৬৬ সালে এ পরিবারের পূর্ব পুরুষ মৃত বিমল চন্দ্র পাল গংয়ের কাছ থেকে ৯ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে কেডিএ। অধিগ্রহণের পরে মূল মালিকের থাকে ১৪ শতাংশ জমি। এর থেকে ৭ শতাংশ অন্য ওয়ারিশ ভোগদখলে থাকলেও দেবাশীষের ৭ শতাংশ জমি বুঝিয়ে না দিয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বরাদ্দ দেয়া ব্যক্তিদেরকে অধিগ্রহণের চেয়ে বেশি জমিতে ভবনের নকশার অনুমোদন দেন। ফলে দেবাশীষ এখন তার পৈতৃক জমি থেকে কেডিএ কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়ার শংকায় রয়েছে বলে পরিবারের থেকে বলা হয়েছে।
এ অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে খুলনা জজ কোর্টে দেওয়ানী বন্টন মামলা দায়ের করে জমির মালিক। এ মামলার এক পর্যায়ে অন্য বিবাদী পক্ষের সাথে মূল মালিকের আপোষ মিমাংসার ভিত্তিতে ডিক্রি প্রদান করে আদালত। সেই সাথে আদালত কর্তৃক নিয্ক্তু কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও ২ যুগেও তা বাস্তবায়ন করেনি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় প্লট বরাদ্দ পাওয়া মালিকদের যোগসাজসে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সংখ্যালঘু পরিবারটিকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালাছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে জমির মালিক তার পৈতৃক সম্পত্তি বুঝে পাওয়া ও অবৈধভাবে নির্মিত ভবন অপসারণের আবেদন জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেডিএ।খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের মাধ্যমে ০১/১৯৬৫-৬৬ নং এল. এ (কেডিএ) কেসের মাধ্যমে নগরীর বানিয়াখামার মৌজার শীববাড়ি পালপাড়া এলাকার সিএস ১৬৮ নং খতিয়ানের ১৫১৭নং দাগ থেকে পাঁচু পালের দুই পুত্র রাজেন্দ্রনাথ পাল ও দেবেন্দ্রনাথ পালের পৈতৃকভাবে প্রাপ্ত ২৩ শতক জমির মধ্য থেকে ৯ শতক জমি অধিগ্রহণ করেন। অধিগ্রহণকৃত এ জমির মূল্য বাবদ কেডিএ তাদেরকে ৭ হাজার ১৪১ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করেন। কেডিএ’র অধিগ্রহণ শেষে মূল মালিকদের ১৪ শতক জমি অবশিষ্ট থাকে। পরে কেডিএ অধিগ্রহণকৃত ৯ শতক জমি এ-৪৭ নং প্লট শেখ আমিনুল ইসলাম ও এ-৪৮নং প্লট মোসা. আফিয়া খানমের নামে বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেয়। তবে মূল মালিক রাজেন্দ্রপাল ও দেবেন্দ্র পালের উত্তরসূরী দেবাশিষ পাল কেডিএ’র এ-৪৭ নং প্লটে তাদের জমি রয়েছে বলে দাবি করলেও তাদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা চলমান থাকায় অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা এখনও নিতে পারেনি কেডিএ।
ভূক্তভোগী মূল মালিকদের উত্তোরাধিকারী দেবাশীষ পাল জানান, তার পিতামহ রাজেন্দ্রনাথ পাল ও পিতামহের ভাই দেবেন্দ্র নাথ পাল উত্তোরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত নগরীর শীববাড়ি পালপাড়া এলাকায় ২৩ শতক জমির মধ্যে ৯ শতক জমি কেডিএ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু প্লট আকারে বরাদ্দের সময় অধিগ্রহণের চেয়ে অতিরিক্ত জমি অন্তর্ভূক্ত করে বরাদ্দ দেয় কেডিএ। পরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা অধিগ্রহণকৃত জমির চেয়ে বেশি দখল করে নেয়। এ বিষয়ে কেডিএ কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার না পেয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা (মামলা নং ৪৬/৯০) দায়ের করা হয়। এ মামলায় ১৯৯৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারী কেডিএর বিরুদ্ধে দোতরফা এবং অন্যান্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে ডিক্রী প্রদান করে আদালত। পরে ২০০০ সালের ৩০ অক্টোবর তর্কিত ভূমির উপর আদালত স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয়। বিজ্ঞ আদালত ২০০৫ সালে ৫ এপ্রিল ১নং বিবাদী কেডিএ’র চেয়ারম্যানকে মূল জমির মালিকদের ১৪ শতক জমি সীমানা চিহ্নিত করে ঐ বছরের ৯ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু কেডিএ কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনা না মেনে আমাদের (দেবাশীষ পাল) ২.৪৮ শতক জমি অন্তর্ভূক্ত করে ভবন নির্মাণের নকশা প্রদান করে। পরে প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত আমিনুল ইসলাম গং হুমকি ধামকি ও ক্ষমতার অপব্যাবহার করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করেন। এ বিষয়ে একাধিকবার কেডিএর চেয়ারম্যান সহ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। উল্টো কেডিএ’র কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস ও অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে আমাদের সম্পূর্ণ সম্পত্তি দখল করে আমাদের ৭ পুরুষের পৈর্তৃক ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে দেশ ছাড়া করার পায়তারা করছে। এমনকি প্লটের মালিকের মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক বার আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গেদিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করেছে কেডিএ কর্তৃপক্ষ। একই সাথে প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তরাও বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে বিতাড়িত করতে নানা হয়রানি ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে প্রাননাশেরও হুমকি দিচ্ছে। এতে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছি। আমাদের ভিটামাটি বুঝে পেতে এবং উচ্ছেদ বন্ধে স্থাণীয় সংসদ সদস্য, সিটি মেয়র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ণে মজিদ স্বরণী তৈরিতে প্রকল্পের মাধ্যমে (কেডিএ এল. এ কেস নং ০১/১৯৬৫-৬৬) জমি অধিগ্রহণ করে। জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখার রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত তথ্য অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে নগরীর বানিয়াখামার মৌজার শীববাড়ি পালপাড়া এলাকার সিএস ১৬৮ নং খতিয়ানের ১৫১৭ নং দাগে বাস্তু শ্রেণীর ২৯ শতক জমি অধিগ্রহণ করে। এর মধ্যে জমির রেকর্ডিও মালিক পাঁচু পালের দুই পুত্র রাজেন্দ্রনাথ পাল ও দেবেন্দ্রনাথ পালের ৯ শতক জমি ৭ হাজার ১৪১ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে অধিগ্রহণ করে। কেডিএ’র অধিগ্রহণ শেষে মূল মালিকদের ১৪ শতক জমি অবশিষ্ট থাকে। পরে কেডিএ অধিগ্রহণকৃত ৯ শতক জমিতে এ-৪৭ (৪.১২ শতক) ও এ-৪৮ (৪.৬৯ শতক) হিসেবে দুটি প্লট তৈরি করে। যা পরবর্তীতে শেখ আমিনুল ইসলামের নামে এ-৪৭ এবং মোসা. আফিয়া খানমের নামে এ-৪৮নং প্লট বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কেডিএ এ-৪৭নং প্লটে আমিনুল ইসলামকে এস এ ২১৬নং খতিয়ানের ১৭২৯নং দাগ থেকে ৪.৯৫ শতক (যার রেকর্ডিও মালিক রামেন্দ্রনাথ পাল দিং) ও এস এ ১০৭৪নং খতিয়ানের ১৭৩৮নং দাগ থেকে ৩.৮৫ শতক (যার রেকর্ডিও মালিক মুন্সি মো. ইমাম মেহেদী দিং) মোট পৃথক দুটি দাগে বিগত ১৯৯৫ সালের ১৬ আগস্ট ৫.৩৩ কাঠা (৮.৮০ শতক) জমি লীজ দলিলমূলে (দলিল নং-১২৭৮) রেজিষ্ট্রি করে দেয়। অন্যদিকে এ-৪৮নং প্লটের মালিক মোসা. আফিয়া খানমকে কেডিএ কর্তৃপক্ষ ১৯৯১ সালের ৩ নভেম্বর ২৭৩৬/৯১ নং লীজ দলিলের মাধ্যমে ৪.৬৯ শতক জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়।
তবে অনুসন্ধানে আরো পাওয়া যায়, ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর কেডিএ’র সার্ভেয়ার শেখ বোরহান উদ্দিন ও বৈষয়িক কর্মকর্তা এম এ সাদ স্বাক্ষরিত ইনফরমেশন স্লিপের মাধ্যমে এ-৪৭ প্লটের মালিক আমিনুল ইসলামকে সিএস ২১৬নং খতিয়ানের ১৫১৭নং দাগ হতে ৪.৯৫ শতক ও ১৫২২নং দাগ হতে ৩.৮৫ শতক যা এস এ ১০৭৪নং খতিয়ানের ১৭২৯ ও ১৭৩৮নং দুটি পৃথক দাগ এবং আর এস ৪০৯৬ ও ৪০৯৭নং দাগে চিহ্নিত করে মোট ৮.৮০ শতক (৫.৩৩ কাঠা) নামজারির সুপারিশ করেন। কিন্তু বিএর এস খতিয়ান নং ৪৪ (যা একমাত্র কেডিএ’র অধিভূক্ত) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে কেডিএ’র অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে বি আর এস ৪৪ নং খতিয়ানের ৪০৯৬ দাগে কেডিএর কোন জমিই নেই। শুধুমাত্র ৪০৯৭নং দাগে ৪.১২ শতক জমি রয়েছে। সেই সাথে সিএস এবং এস এ খতিয়ান পর্যালোচনায় দেখা যায় সিএস ২১৬নং খতিয়ানের ১৫১৭নং দাগ হতে ৪.৯৫ শতক ও ১৫২২নং দাগ হতে ৩.৮৫ শতক যা এস এ ১০৭৪নং খতিয়ানের ১৭২৯ ও ১৭৩৮নং দুটি পৃথক দাগে মজিদ সরণী রাস্তার দুই পাশে এ-৪৭ প্লটের জমি দেয়া হয়েছে। যেটা বর্তমানে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরের অধিনের জায়গার মধ্যে একাংশ রয়েছে।
অন্যদিকে মজিদ সরণীর এ-৪৮নং প্লটের মালিক মোসা. আফিয়া খানমকে কেডিএ কর্তৃপক্ষ সিএস ২১৬নং খতিয়ানের ১৫১৭নং দাগ, এস এ ১০৭৪নং খতিয়ানের ১৭২৯ দাগ এবং আর এস ৪৪নং খতিয়ানের ৪০৯৫নং দাগ হতে ৪.৬৯ শতক জমি লীজ দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেয়। পরে ২০২২ সালে কেডিএ’র সার্ভেয়ার মো. মিরাজ হোসেন ও বৈষয়িক অফিসার এম এ সাদ স্বাক্ষরিত ইনফরমেশন স্লিপের মাধ্যমে নামজারির সুপারিশের ভিত্তিতে প্লট মালিক আফিয়া খানম নামজারি সম্পন্ন করেন। এ প্লটের মালিক আফিয়া খানমকে কেডিএ বরাদ্দকৃত ৫ কাঠা (৮.২৫ শতক) জমি বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। এতে প্লটের ভবন নির্মাণে জটিলতা সৃষ্ঠি হলে পরে তিনি জমির মূল মালিকদের কাছ থেকে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল ২৪৬৬/১৮ নং দলিলের মাধ্যমে ৩.৫৬ শতক জমি ক্রয় করে ৫ কাঠার প্লট পূর্ণ করে ভবন নির্মাণের নকশা গ্রহণ করেন।
জমির মালিক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সংগৃহীত নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে মজিদ সরণী প্রকল্প বাস্তবায়ণে কেডিএ অধিগ্রহণকৃত জমির চেয়ে বেশি পরিমাণ দখল করেছে। অন্যদিকে বরাদ্দকৃত প্লট মালিকদের সম্পূর্ণ ৫ কাঠা পরিমাণ জমি বুঝিয়ে না দিয়ে মূল মালিকের জমি জবর দখলে রাখতে উৎসাহীত করে যাচ্ছে। অধিগ্রহণকৃত ৯ শতক জমি ব্যতীত একই খতিয়ান ও দাগে মালিকের বাকী জমি বুঝিয়ে না দিয়ে তাকে উচ্ছেদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কেডিএ’র এ অনিয়ম ও দখলবাজীর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে মূল জমির মালিকরা ১৯৯০ সালের ২১ মে দেওয়ানী আদালতে মামলা (নম্বর ৪৬/৯০) দায়ের করেন। মামলার নথিপত্র, আদেশ ও ডিক্রী পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেওয়ানী মামলার বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে ১৯৯৯ সালে বাটোয়ারা মামলাটি ২২/৯৯ নং হিসেবে ধার্য্য হয়। এ মামলায় ২০০৫ সালের ৫ এপ্রিলের ৪৫ নং আদেশে বিজ্ঞ আদালত কেডিএ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে সুনির্দিষ্টভাবে মূল মালিকের ১৪ শতক জমির সীমানা চিহ্নিত করে সার্ভেয়ার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। আদালতে নির্দেশনায় কেডিএ কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালের ৬ জুলাই সীমানা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করে। জমির মূল মালিক মামলায় ২০১০ সালে কয়েকজন বিবাদীর সাথে সোলেসূত্রে ডিক্রী পায়। পরে ২০১১ সালে আদালত কেডিএর প্লটের মধ্যে মূল মালিকদের দাবীকৃত জমি চিহ্নিত করতে এ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করেন। ঐ বছরের ১৮ মার্চ এ্যাডভোকেট কমিশনার হরেন্দ্রনাথ মন্ডল সরেজমিন পরিমান করেন। পরে তিনি ১০ এপ্রিল কেডিএ’র বরাদ্দকৃত প্লটের মধ্যে মূল মালিকদের ২.৬৯ শতক জমির রয়েছে উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত নিযুক্ত এ্যাডভোকেট কমিশনার সরেজমিন পরিমাপ শেষে দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিপক্ষে কেডিএ ২০১২ সালের ১ মার্চ আদালতে আপত্তি দাখিল করে।
এর আগে কেডিএ’র এ-৪৭ নং প্লটের লীজ গ্রহিতা আমিনুল ইসলাম সোলে ডিক্রী রদ ও রহিত করাসহ মামলায় (নং ২২/৯৯) পক্ষভূক্ত হতে মিস ৫০/২০১০ মামলা দায়ের করেন। এ মামলা আদালত শুনানী শেষে খারিজ করে দেন। পরে আমিনুল ইসলাম উচ্চ আদালতে মিস আপীল (নং ১৬/১২) দাখিল করলে না মঞ্জুর হয়। পরবর্তীতে আপীলের রিভিউ করলেও অতিরিক্ত জেলা জজ ২য় আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো ইয়ারব হোসেন ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল রিভিউ খারিজ করে দেন।
কিন্তু জমির মালিকদের দায়ের কৃত মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কেডিএ অনিয়ম ও দূর্নীতি করে এ-৪৭ প্লট মালিক আমিনুল ইসলামকে কেস নং ৭৯২/১২ এর মাধ্যমে ২০১২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভবন নির্মাণের নকশা প্রদান করে। যেখানে কেডিএ’র চিহ্নিত ডিসপুটেড ল্যান্ড বা বিরোধপূর্ণ জমি ব্যতীত ১৮.২৯ মিটার বা ৬০ ফুট বাই ১৪.৬৩ মিটার বা ৪৮ ফুট (৬.৬০ শতক বা ৪ কাঠা) জমি উল্লেখ করা হয়। এ নকশায় কেডিএর অধিগ্রহণকৃত ৯ শতক জমির মধ্যে এ-৪৭ প্লটে ৪.১২ শতক জমি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে মূল মালিকদের ২.৪৮ শতক জমি অন্তর্ভূক্ত করে ভবন নির্মাণের নকশা প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ১০০৪/১৩ নং কেসের মাধ্যমে কেডিএ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ও অনৈতিক লেনদেনে অবৈধভাবে বিরোধপূর্ণ জমিসহ এ-৪৭ প্লটের মালিককে ২৪.৩৯ মিটার বা ৮০ ফুট বাই ১৪.৬৩ মিটার বা ৪৮ ফুট (৮.৮১ শতক বা ৫.৩৪ কাঠা) জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য পূনরায় নকশার অনুমোদন দেয়া হয়। সবশেষ নকশা অনুমোদনে দেখা যায় এ-৪৭ প্লটের মধ্যে মূল মালিকদের ৪.৬৪ শতক জমি অবৈধভাবে কেডিএ অন্তর্ভূক্ত করেছে।
এসকল অনিয়মের বিষয়ে কেডিএ’র সংশ্লিষ্ট শাখায় তথ্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিরুপ আচরণ করেন। এ সকল শাখা সমূহে অনুসন্ধানী টিম গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিকবার যোগাযোগ করেও সন্তোষজনক কোন তথ্য পায়নি। একইভাবে তথ্যের জন্য কেডিএ’র চেয়ারম্যানের দপ্তরে অসংখ্যবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে কেডিএ’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কেডিএ’র মজিদ সরণী প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দকৃত প্লট নিয়ে দীর্ঘ ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে জটিলতা চলছে। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত জমির মূল মালিকদের অবশিষ্ট জমি বিভিন্ন সময়ে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করলেও সেটিরও কোন সূরাহা হয়নি। জমির মূল মালিকরা আদালতে মামলা দায়েরের পর ২০১১ সালে আদালত নিযুক্ত এ্যাডভোকেট কমিশনারের দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কেডিএ আপত্তি দাখিল করেছে। মামলা এখনও চলমান থাকায় এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মামলা চলমান অবস্থায় প্লট মালিকদের কিভাবে নকশা অনুমোদন করা হলো এবং অধিগ্রহণকৃত জমির চেয়ে বেশি জমি দেখিয়ে কিভাবে প্লট বরাদ্দ দেয়া হলো সে বিষয় তিনি এড়িয়ে যান।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এ্যাড. কুদরত ই খুদা বলেন, আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় অধিগ্রহণের অতিরিক্ত জায়গায় ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়া একটা বড় দূর্নীতি। কেডিএ’র এ ধরণের কাজ করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দূর্নীতি করেছে। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জমির মূল মালিকদের তাদের বাকি জায়গার চৌহদ্দি নির্দিষ্ট করে কেডিএ কর্তৃপক্ষের বুঝিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।