• E-paper
  • English Version
  • শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

×

ভেজাল প্রতিরোধে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে

  • প্রকাশিত সময় : রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩
  • ৮০ পড়েছেন

কিশোর বিদ্রোহী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য মারা গিয়াছেন দেশ বিভাগেরও পূর্বে, ১৯৪৭ সালের ১৩ মে। সেই সময় কবি লিখিয়াছিলেন, ‘ভেজাল পোশাক, ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা, ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা।’ তাহার প্রয়াণের পর ৭৬ বছর পার হইয়া গিয়াছে; কিন্তু আজও এই উপমহাদেশ হইতে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা কমে নাই। বরং অন্য কিছুর ন্যায় ইহারও প্রমোশন বা উন্নতি হইয়াছে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। আমরা কত কিছুতে উন্নতি লাভ করিলাম; কিন্তু এই ভেজালের রাজত্ব দূর করিতে পারিলাম না। আফসোস, এমন আত্মঘাতী কাজ মানুষ কি করিতে পারে!

আর কিছুদিন পরই আসিতেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির এই ঈদ উপলক্ষে বাজারে মসলা জাতীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহাই স্বাভাবিক। প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়; কিন্তু ইহার সহিত পাল্লা দিয়া সক্রিয় হইয়া উঠিয়াছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। তাহারা বিভিন্ন প্রকার মসলায় ভেজাল সংমিশ্রণে তৎপর হইয়া উঠিয়াছে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় তাহারা গড়িয়া তুলিয়াছে ভেজাল গুঁড়া মসলার কারখানা। সেখানে কাপড়ের রং ও ধান-চাউলের তুষ তথা পশুখাদ্য মিশাইয়া তৈরি করিতেছে গুঁড়া মসলা। এই ভেজাল মসলা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইহাতে ক্যানসার, লিভার ও কিডনি বিকল, চর্মরোগ, পাকস্থলীর রোগসহ নানা জটিল অসুখবিসুখ হইতে পারে। ধান-চাউলের তুষ হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায় বলিয়া পাকস্থলী ও কিডনি ধীরে ধীরে অকেজো হইয়া যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, বাজারের খোলা ও প্যাকেটজাত গুঁড়া মসলার অধিকাংশই ভেজাল। অনেক সময় মসলায় কাঠের ভুসিও মিশানো হয়। মরিচের গুঁড়ায় ঝাল ও সরিষার তৈলে ঝাঁঝ বাড়াইবার জন্য মিশানো হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। হলুদের সহিত লেড ক্রোমেট ও ধনের সহিত হাইড্রোজ মিশানোর কথাও আমরা জানি। এই সকল ভেজাল খাদ্য নীরব ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে; কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। অতি লোভ তাহারা সংবরণ করিতে পারিতেছে না। গুঁড়া মসলায় এমন ভেজাল জানিয়া-শুনিয়া বিষপানের শামিল।

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপদ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের বাকলিয়ার মিয়াখান নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করিয়া কয়েক জনকে পাকড়াও করিয়াছে। তবে এই অভিযান শুধু চট্টগ্রামেই নহে, সমগ্র দেশেই পরিচালনা করা প্রয়োজন। ঈদুল ফিতরের সময় আমরা যেমন সেমাইতে ভেজাল দেওয়ার খবর পাই, তেমনি ঈদে ভেজাল মসলার কারবারিদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়া যায়। তাহাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা না লইলে তাহাদের এই অপতত্পরতা বন্ধ করা যাইবে না। আমরা জন্মের পর হইতেই খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কথা শুনিয়া আসিতেছি। ইত্তেফাকের ‘আমরা কী খাচ্ছি‘ নামের সিরিজ রিপোর্টের পর জনগণের মধ্যে এই ব্যাপারে কিছুটা সচেতনতা আসিয়াছে; কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপ কাঙ্ক্ষিতভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ায় ভেজালের অবসান হইতেছে না। এই ব্যাপারে এখন কদাচিৎ ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। অথচ এইরূপ পদক্ষেপ সমগ্র বছর ধরিয়াই অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আবার সুকান্তের ভেজাল কবিতায় ফিরিয়া আসিতে হয়। তিনি আরও লিখিয়াছেন, ‘ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা,/ ‘কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হ্যায় ফয়দা’। ভেজাল করিয়া ভেজালকারবারিরা যাহাতে ফায়দা লুটিতে না পারে, সর্বাগ্রে তাহারই ব্যবস্থা নিতে হইবে। নতুবা ‘ভেজাল নামটা খাঁটি কেবল আর সকলেই মিথ্যে’ হইয়া যাইবে। এই জন্য আমাদের সকলকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হইতে হইবে। বাজারজাত মসলা নানা উপায়ে পরখ করিয়া ক্রয় ও ব্যবহার করিতে হইবে।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA