শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
খুলনার সবজির বাজারে দামে স্বস্তি;কমেছে গোশ ও মাছের দাম  নির্বাচনের ট্রেন চলছে, কেউ থামাতে পারবে না : ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা আমাকে এমপি না, জনতার সেবা করতে পাঠিয়েছেন : এস এম কামাল হোসেন ডলারের দাম আরও কমলো খুলনায় কয়লা ও গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিকী প্রদর্শন খুলনা—১ আসন: জনগণের জন্য কাজ করতে চান সাবেক এমপি ননী গোপাল নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খান (অব:) এর খুলনা সফরসূচি বিএনপি নেতার ভাইয়ের ইন্তেকালে শোক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে নোবেল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নড়াইলের নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

“তুই আমার বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করলি? তোকে আমি ফাঁসির কাষ্টে ঝোলাবো।”-বনানীর কাকলী

মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩
  • ৭৯ পড়েছেন
রাজধানীর বনানী-এয়ারপোর্ট রোডে কাকলী নামে যে বাসস্ট্যান্ড রয়েছে সেটা সবাই জানেন।
সেখানে কাকলী নামে একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো সেটাও অনেকে জানেন কিন্তু এই নামকরণের পেছনে যে সাহসিকতার ইতিহাস রয়েছে তা অনেকেই হয়তো জানেন না।
মূলত কাকলী নামের রেস্টুরেন্টের কারণে স্থানটি পরিচিত হয়ে ওঠে। আর কাকলী রেস্টেুরেন্টটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এর মালিক শেখ ফেরদৌসী কাজল কাকলীর কারণে। সবাই তাঁকে কাকলী আপা নামে চেনে।
সময়টা ১৯৮৯ সাল। তখন বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে শেখ রাসেল শিশু কিশোর আয়োজিত এক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করেন কাজল (কাকলী)।
তখনকার পরিচিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা হচ্ছে ‘সুগন্ধা’। সুগন্ধা পত্রিকায় কাকলীর একটি লেখা ‘তোমায় ভুলিনি হে জ্যোতির্ময় পিতা’ শিরোনামে ছাপা হয়েছিলো।
এরপর থেকে কাকলী সুগন্ধায় নিয়মিতই লিখতেন এবং পড়তেন ।
১৯৯০ সালের নভেম্বরের সুগন্ধার একটি সংখ্যাতে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুকের একটি লেখা ছাপা হয়-শিরোনাম ছিলো
‘আমিই শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি, সাহস থাকলে শেখ হাসিনা জিজ্ঞাসা করুক’
এই লেখাটি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কাকলী। সাইকেল চালিয়ে সোজা চলে যান কর্নেল ফারুকের বাড়িতে। কলিং বেল চাপতেই লম্বা, ফর্সা একজন লোক এসে দরজা খুলে দিলো। বুঝতে বাকী রইল না যে তিনিই কর্ণেল ফারুক। ক্ষিপ্ত কাকলী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন-
‘তুই আমার বঙ্গবন্ধুকে কেন মারলি?’
কর্ণেল ফারুক কোনো জবাব দিলোনা, চুপ ছিলো। তারপর আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই আমার শেখ রাসেলকে কেন মারলি? তোকে আমি ফাঁসির কাস্টে ঝোলাবো, তুই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি।’
কর্ণেল ফারুক জবাব দিলো, ‘আপনি এখনো অনেক ছোট, বড় হলে বুঝবেন আমি কেন শেখ মুজিবকে মেরেছি!’
চিৎকার-চেচামেচি শুনে এরই মধ্যে কর্ণেল ফারুকের মা ও আসলো এবং জিজ্ঞেস করলো, ‘ও কে?’
তখন বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুক বললেন,
‘ও বনানী স-মিল ও কাকলী মার্কেটের মালিক নুরু শেখের মেয়ে।’
এরপর কাকলী কর্ণেল ফারুকের মাকে বললেন, ‘এই ছেলেকে আপনি পেটে ধরেছেন?
তিনিও কিছু না বলে মুচকি হাসি দিলেন।
খুনী কর্ণেল ফারুক তখন বললেন, ‘আপনি সাপ্তাহিক ‘সুগন্ধা’ ম্যাগাজিনে লিখেন, আমি আপনার প্রতিটা লেখা পড়ি। আপনি খুব ভালো লিখেন।’
এরপর সেখান থেকে বের হয়ে কাকলী দেখেন তাঁর সাইকেল উধাও। এরপর আবার চেচামেচি শুরু করলে কর্ণেল ফারুকের লোকজন সাইকেল বের করে দেয়। কাকলী সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে যান!
বাসায় এসেই কাকলীর তাঁর বাবার সাথে দেখা, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা মনি তুমি কোথায় গিয়েছিলে?’
সব শুনে কাকলীর বাবা বললেন, ‘যা ই করেছো মা ভালো করেছো, কিন্তু আমার তো সর্বনাশ হয়ে গেলো।’ কাকলী তখনও তাঁর বাবার এ কথার অর্থ বুঝতে পারেননি, কিন্তু তা বুঝতে বেশি দেরিও হয়নি।
কারণ, তাঁর এক সপ্তাহের মধ্যেই কাকলীদের বনানী স-মিলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো, ৬৫ টি দোকানসহ কাকলী মার্কেট ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হলো, এছাড়াও নানা ধরনের নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলো কাকলীর পরিবার।
এরপরের ঘটনা ২০০৯ সাল। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা নানা উত্থান পতনের পর সর্বশেষ ২০০৯ সালে কর্নেল ফারুকসহ আরো কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়।
রায় দেয়ার আগে কাকলী ভাবছিলেন, তিনি যদি কোর্টরুমে কোনভাবে থাকতে পারতেন। তাহলে সেদিনের সেই মুচকি হাসির জবাবটা তিনি চোখের চাহনিতে ই কর্ণেল ফারুককে দিতে পারতেন!
অন্তত রায় পড়ার সময় তাঁকে থাকতেই হবে যে কোন উপায়ে।
অবশেষে তিনি থাকতে পেরেছিলেন কোর্টের তিন তলায়, যেখানে রায় পড়ে শুনানো হয়েছিল!
কোর্টে তিনি কর্ণেল ফারুককে দেখলেন আসামীর কাঠগড়ায়। কর্ণেল ফারুক কাকলীকে দেখে সেদিনও নাকি একটি মুচকি হাসি দিয়েছিলেন। ১৯৯০ সালের দিকে কাকলী মার্কেটের পাশাপাশি কাকলী রেস্টুরেন্টটিও খুব জনপ্রিয় ছিল। কর্নেল ফারুকের নির্দেশে ঐ মার্কেট ভাঙা ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল!
আর এর মধ্যেই ওই এলাকার নাম হয়ে উঠেছিল কাকলী আপার ‘কাকলী’!

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu