খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) নেতাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সদস্যপদ প্রদান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনে অনিয়ম এবং কেইউজের কার্যনির্বাহী কমিটির অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট নং ১৬৫৬/২০২২ এর আদেশ প্রতিপালনসহ অভিযোগ নিষ্পত্তি করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম দপ্তর ।
বৃহষ্পতিবার বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান নির্বাচনের আগেই হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ প্রতিপালনসহ অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়ে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজ) সভাপতি মো: ফারুক আহমেদ ও সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানকে পত্র প্রেরণ করেন। এর আগে কেইউজের দুই সদস্য সুনীল দাস ও বাবুল আকতার খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন বরাবর বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) এ অভিযোগ দায়ের করেন। এ নিয়ে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান চিঠিতে জানান, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (রেজিঃ নং-খুলনা-১০০৮) দুই সদস্য সুনীল দাস ও মোঃ বাবুল আকতার অভিযোগ করেছেন যে, কেইউজের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের জন্য আদালতের আদেশ মোতাবেক ভোটার তালিকা সংশোধন না করে আদালত অবমাননা ও গঠনতন্ত্র না মেনে নতুন সদস্য দিয়ে সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ স্বাক্ষরিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিগত ২০২২ সালের আগস্ট মাসে মহামান্য হাইকোর্ট-এর রিট পিটিশন নং ১৬৫৬/২০২২ এর আদেশে তিনজন মালিকের (প্রকাশক ও সম্পাদক) সদস্যপদ বাতিলের আদেশসহ গঠনতন্ত্রের বিধির বাইরের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তিনজন মালিকের ইউনিয়নের সদস্যপদ বাতিল হলেও গঠনতন্ত্রের বিধির বাইরের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে মহামান্য হাইকোর্ট-এর আদেশ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সংগঠনের সর্বশেষ দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন (২০২৩-২৪) পর্যন্ত মোট স্থায়ী সদস্য (ভোটার) ছিল ১২৮ জন। যাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি দ্বৈত পেশায় সম্পৃক্ত, সংবাদপত্র শিল্পের মালিক, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান কমিটি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং গঠনতন্ত্রের ধারা লংঘন করে কার্যনির্বাহী পরিষদ আরো ১১৪ জনকে নতুন সদস্যপদ প্রদান করেছে। যা খসড়া ভোটার তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন এসব সদস্যদের অধিকাংশই সাংবাদিকতা পেশায় সম্পৃক্ত নন। নতুন সদস্য দেওয়ার ক্ষেত্রে গঠণতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-২ এর ধারা-১ মানা হয়নি। শ্রম আইনের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী তাদের নিয়োগপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্রে অনেক অসংগতি রয়েছে। স্থানীয় পত্রিকাগুলো তাদের বিগত অডিট প্রতিবেদন বা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে প্রদত্ত প্রতিবেদনে এসব সাংবাদিকদের তালিকা ও বেতন-ভাতার প্রতিবেদনে তাদের নাম নেই। একই সাথে সম্প্রতি রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নকে অবগত ছাড়া নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি গঠন ও তফশীল ঘোষণা করা হয়েছে। যা শ্রম আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও যথাযথ হয়নি বরং সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের বাইরে শুধুমাত্র নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে নতুন একজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও নতুন ভোটার তালিকার ১৬৩নং ভোটার শেখ মোঃ সেলিম। অভিযোগের বিষয় বিবেচনায় এনে উচ্চ আদালতের আদেশের আলোকে সদস্যতা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সঠিক ভোটার তালিকা প্রকাশ, সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও শ্রম আইন মোতাবেক নতুন সদস্যপদ প্রদান ও কার্যনির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনের স্বার্থে আগামী ০৯ মার্চ খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচন সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য এ দপ্তরের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কেইউজ’র কার্যনির্বাহী কমিটির অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট নং ১৬৫৬/২০২২ এর আদেশ প্রতিপালন এবং আভিযোগকারীদ্বয়ের বর্ণিত অভিযোগ নিষ্পত্তিপূর্বক কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।