সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

অর্থের বিনিময়ে বনমালী হত্যা মামলা ধামাচাঁপা

দেশ প্রতিবেদক:
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৯০ পড়েছেন

কয়রা উপজেলার ৬নং কয়রার বাসিন্দা যতীন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে ব্যবসায়ী বনমালী মন্ডল (৪২) ২০২৩ সালের ২৫শে জুন নিখোঁজ হন। পরদিন ২৬ জুন সকালে খুলনা রেলওয়ে ইয়ার্ডে ব্যবসায়ী বনমালীর লাশ লোকজন দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এর কিছুদিন পর নিহতের স্ত্রী সীমান্তী মন্ডলকে না জানিয়েই নিহতের ভাই কেশব মন্ডল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এই কেশব মন্ডলই হত্যা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। বনমালীর জীবনে কী এমন ঘটেছিলো? যার জন্য তাকে জীবন দিতে হলো? অন্যদিকে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় করে হত্যা মামলার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে কেনো? পুরো বিষয়টিই রহস্য ঘেরা রয়ে গেছে। এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ নিয়ে থাকছে বনমালী হত্যার পিছনের রহস্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। খবর জানিয়েছে, প্রায় এক কোটি টাকার বিনিময়ে একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে অমিত ঘোষ ওরফে ব্যবসায়ী ভোলা বনমালী হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। যেখানে কেশব মন্ডলকে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করানো হয়েছে। কেশব মন্ডল টাকার বিনিময়ে নিজের আপন ভাইয়ের হত্যাকারীদের সাথে মিশে এ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আর ১৪ লক্ষ টাকা এক কালীন কেশব মন্ডলের মাধ্যমে নিহত বনমালীর স্ত্রীকে দেয়া হয়। নিহতের স্ত্রী সীমান্তী মন্ডল টাকার বিষয়ে কেশব মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে ১৪ লক্ষ টাকা বনমালীর ব্যবসায়ীক পাওনা টাকা বলে এড়িয়ে যান। বনমালীর স্ত্রী মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কেশব মন্ডলকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি মামলা প্রত্যাহার করিনি। আর এ নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না বলে সীমান্তী মন্ডলকে জানান কেশব মন্ডল। মামলাটি পরবর্তীতে পিবিআই তদন্ত করে এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বনমালীর পরিবার। তথ্য সূত্রে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখ কেশব মন্ডল বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এরপর দীর্ঘ এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কেশব মন্ডল খুলনা রেলওয়ে পুলিশ সুপার বরাবর মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আবেদনে কেশব মন্ডল বলেন, আমি এই মামলার বাদী গত ইং ২৬/০৬/২৩ তারিখ সকালে আমার ছোট ভাই বনমালী মন্ডলের লাশটি খুলনা পুরাতন রেলওয়ে ষ্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে ফাঁকা জায়গায় রেনট্রি গাছের নিচে পাইয়া পুলিশ সুরতহাল করে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেন। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজনসহ এসে লাশ দেখি। ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে বাড়ী যাই ও লাশের সৎকার করি। পরবর্তীতে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে নানা রকম কথা শুনে আসামী ১। অমিত ঘোষ (৫০) ২। মিঠু ঘোষ (৪০) ৩। মিতা (৩৫) স্বামী—অমিত ঘোষ, ৪। সঞ্জিব ঘোষ (৪৫) ৫। মোঃ মিন্টু (৩৫) ৬। সাধন ঘোষ (৫৫) সর্ব পিতা— অজ্ঞাত সর্ব সাং—ষ্টেশন রোড, ঘোষ ট্রেডার্স কদমতলা থানা—সদর, জেলা— খুলনাদের বিরুদ্ধে গত ইং— ০২/০৭/২৩ তারিখ খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করি। পরবর্তীতে ব্যাপক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি আসামীদের প্রতিষ্ঠানে আমার ভাই আগে চাকরী করত। আসামীদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে চলে এসে নিজে ব্যবসা শুরু করায় আসামীদের সাথে আমার ভাইয়ের মনোমালিন্য হয়। এই কারনে তাদের সন্দেহ করি। এই কারনে মামলাটি করলেও পরবর্তীতে ব্যাপক খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি তারা জড়িত নয়। আমার ভাই মনের দুঃখে বিষ খেয়ে মারা গেছে। আমার পরিবারের লোকজন ও মৃতের স্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনা করে সবার সিদ্ধান্ত অনুসারে মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মামলাটি প্রত্যাহার করতে ইচ্ছুক। আমার মামলার কারনে নির্দোষ ব্যবসায়ীরা হয়রানী হোক আমি চাইনা। নিহতের স্ত্রী সীমান্তী মন্ডল অভিযোগ করে বলেন (বনমালীর লাশ পাওয়ার দিনের বক্তব্য), তার স্বামী ৮ বছর পূর্বে খুলনার কদমতলা এলাকার লঞ্চ টার্মিনালের পূর্ব দিকে মেসার্স ঘোষ ট্রেডার্সে চাকুরি নেয়। ১ বছর আগে চাকুরি ছেড়ে নিজে কদমতলা এলাকায় পদ্মা বাণিজ্য ভান্ডার নামে একটি দোকান ভাড়ায় নিয়ে কাঁচামালের কমিশন এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা শুরুর কয়েক মাস পর থেকে ঘোষ ট্রেডার্সের মালিকের রোষানলের শিকার হন তার স্বামী। তিনি আরো বলেন, ২৫ জুন তার স্বামী নিখোঁজের পর ঐ রাতে স্বামীর পাঠানো শুধুমাত্র একটা মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, তার স্বামীর মুখে কাপড় বেঁধে অজ্ঞাত জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। স্বামীর সন্ধান পেতে এক পর্যায়ে পুরাতন কর্মস্থল ঘোষ ট্রেডার্সের মালিক অমিত ঘোষ ও সনজিত ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে অমিত ঘোষের স্ত্রী মোবাইল ফোনে তাকে ধমক দিয়ে বলেন, এখন কেন চেঁচামেচি করছো, তোমার স্বামী আমাদের সাথে অনেক বেঈমানি করেছে। সীমান্তী মন্ডল তখন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার স্বামী আপনাদের প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরি ছেড়ে নিজে ব্যবসা করছে, এটা কি বেঈমানি করা হলো। আপনাদের পায়ে পড়ি আমার স্বামীর সন্ধান দিন।
তথ্য সূত্র বিশ্লেষনে দেখা যায়, নিহত বনমালী মন্ডলের ভাই কেশব মন্ডল মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে দাবী করেন তার ভাই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু ঘটনার দিন কেশব মন্ডল খুলনাতে ছিলেন না। নিহতের স্ত্রী সীমান্তী মন্ডল দাবী করেছেন, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে এবং অনুসন্ধানে বনমালী নিখেঁাজ হওয়ার দিনে বনমালীর ফোনের হটস এপ থেকে তার ম্যানেজারের ফোনে একটি মেসেজ আসে। যেখানে লেখা ছিলো, ২৫ তারিখ বিকাল ৪:৩০ টার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার চোখ বেধে আটকে রেখেছে। পরে কৌশলে সে ম্যাসেজ দেয় ম্যানেজারকে। কারো সাথে আর দেখা হবে না হয়তো বলে ম্যাসেজে শঙ্কা প্রকাশ করেন বনমালী। আর দুলা ভাইকে বিষয়টি জানাতে বলেছেন। ব্যবসায়ী অমিত ঘোষের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, কেশব মন্ডল কি করছে সে বিষয়ে আমি জানি না। আর বনমালী হত্যার বিষয়ে তিনি জানেন না বলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu