রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

অদৃশ্য নেতৃত্বের দিকে দৌড় ঝাপ খুলনা ছাত্রলীগের

মো. আরিফুর রহমান:
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৮৯ পড়েছেন

সাংগঠনিক গুনাবলি সমৃদ্ধ প্রার্থীকে মূল্যায়ন করতে হবে— সাবেক ছাত্রনেতৃবৃন্দ

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে খুলনা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাটি হাটি পা পা করে খুলনাসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী ঘাটিতে পরিণত করেছে। এই সংগঠনের অন্যতম শক্তিই হলো ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ খুলনা জেলা এবং মহানগরের ছাত্রলীগ কর্মীদের থেকে জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছে। যা ছাত্রদের মাঝে কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও শংকা কাটেনি অনেকের। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় মেধাবী ছাত্ররা নানা কারণে বিভিন্ন পেশায় ঢুকে পড়েছে। ফলে নেতৃত্বের সংকটও দেখা দিয়েছে দু’টি ইউনিটে। এই সংকট কতদিনে দুর হবে এমন প্রশ্ন বর্তমান ছাত্র নেতাদের। তদুপোরিও আশার আলো সামনে রেখে নেতৃত্ব পাওয়ার আকাংখায় দৌড়ঝাপ করছে ছাত্রনেতারা। মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে দৈনিক দেশ সংযোগের প্রতিবেদক আরিফুর রহমানের ধারাবাহিক পর্বের প্রথম পর্ব।
নয় বছর পর খুলনা মহানগর ও সাত বছর পর খুলনা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ শুরু করে। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের যৌথ স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানোর পর খুলনা জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশিদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা এবং উদ্দীপনা কাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সম্মেলনে মো. পারভেজ হাওলাদারকে সভাপতি ও মো. ইমরান হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এই ইউনিটে সম্মেলনের কোন সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। অথচ প্রতি বছর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে নেতৃত্বের চরম সংকট দেখা দিয়েছে ইউনিটটিতে। অন্যদিকে, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৫ সালের ৮ জুন। ২১৫ সদস্যের কমিটির অধিকাংশই এখন ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন যুবলীগের পদ পেয়েছেন সাড়ে ৪ বছর আগে। আড়াই বছর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক হয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল। নেতৃত্ব শূন্য খুলনা মহানগর ছাত্রলীগে গত ৪—৫ বছর ধরে চলছে স্থবিরতা। তবে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের পুরাতন এবং নতুন কর্মীদের দিক নির্দেশনা দিয়ে সংগঠনকে সচল রাখার চেষ্টা করছেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করছেন, খুলনা জেলা এবং মহানগর ছাত্রলীগকে আরো শক্তিশালী ইউনিটে পরিনত করার সময় এখন। স্বচ্ছ আওয়ামী পরিবারের, মেধাবি শিক্ষার্থী, সাংগঠনিক ভাবে দায়িত্বশীল কর্মীদের মধ্য থেকে বাছাই করে যোগ্য কর্মীর হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে। প্রতিহিংসা পরায়ণ, অত্যাচারী, গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়িত কাউকে নেতৃত্বের জায়গায় আনা উচিত হবে না। এ ধরনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক পরিবশে তৈরী হয় এবং নতুন কর্মী তৈরী হয় না। ছাত্র জীবণের এ সময়ে মানবিক কাজ করার অনেক সুযোগ থাকে। এজন্য মানবিক গুনাবলির দিকেও নেতৃত্ব বাছাইয়ে খেয়াল রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করেন জেষ্ঠ্য সাবেক ছাত্রনেতারা।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রনেতা এম ডি এ বাবুল রানা: আওয়ামী পরিবারের সন্তান, সৎ, নিষ্ঠাবান, মেধাবি এবং মানবিক গুনাবলি সমৃদ্ধ প্রার্থীদের খুলনা জেলা এবং মহানগর ছাত্রলীগের ইউনিটের নেতৃত্বের জন্য বাছাই করতে হবে। নতুবা খুলনা জেলা এবং মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি গতিশীল হবে না। কর্মীদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে ইউনিটকে এগিয়ে নিতে পারেন একজন যোগ্য নেতা। এজন্য ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র এবং সার্বিক দিক বিবেচনায় রাখতে হবে। ‘এম ডি এ বাবুল রানা ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ন পদে থেকে তার ইউনিটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি তৎকালীন সময়ে প্রায় চার বছর খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন।’
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদুল হক মিন্টু: ছাত্রলীগের মতো গুরুত্বপূর্ন সংগঠনে যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্ব প্রয়োজন। যারা খারাপ সময় এবং ভালো সময় বুঝে নেতৃত্ব দিবে। প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করতে পারবে এমন কর্মীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। দীর্ঘদিন খুলনা মহানগর এবং খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হওয়াতে অনেক প্রার্থীর ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স। তাদের মধ্যে অনেকের নেতৃত্বের স্বাভাবিক গুনাবলি বিদ্যমান। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়াতে নতুন কর্মী বাড়েনি। তবে বর্তমান সময়ে সৎ , নিষ্ঠাবান এবং যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্ব ছাত্রলীগকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন। ‘শহীদুল হক মিন্টু একজন সাবেক ছাত্রনেতা এবং ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন।’
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা জামাল উদ্দিন বাচ্চু: ছাত্রদের এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভুলে গেলে চলবে না। ছাত্র জীবণ মানবিক কাজ করার সময়, শেখার সময়। আমরা আওয়ামী লীগের দু:সময় দেখেছি। দু:সময়ে রাজনীতি করেছি। এখন আওয়ামী লীগের সু সময়। এ সময়ে শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে। খুলনা জেলা এবং মহানগরে কলেজ কমিটি করতে হবে। কলেজ কমিটি থেকে মহানগর কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। সব কিছুই একটা চেইনের মাধ্যমে করতে হবে। তাহলে ছাত্রলীগ কর্মীদের মেধা বিকশিত হবে। ছাত্রলীগ কর্মীদের অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কোন গ্রুপিং রাখা যাবে না। একজন ছাত্রনেতা হাটলে তার সাথে সাধারন ছাত্ররা ভালোবেসে হাটবে। সে পরিমান যোগ্যতা এবং সাংগঠনিক ক্ষমতার দিকে নজর রেখেই ছাত্রলীগের কমিটি হতে হবে। ‘জামাল উদ্দিন বাচ্চু ১৯৯০ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও ছাত্র জীবণে খুলনা জেলা এবং মহানগর কমিটির বিভিন্ন পদে থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।’
খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আলী আকবর টিপু: আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, চাঁদাবাজ না, মাদক ব্যবসায়ী না, ভূমিদস্যু না এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সবসময় উজ্জীবিত কর্মীদেরই খুলনা মহানগর এবং জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া উচিত। ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী হিসাবে আমি মনে করি, ছাত্রলীগের নতুন প্রান , নতুন অনুপ্রেরনা দরকার। অনেকে দীর্ঘদিন খুলনার ছাত্রলীগকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। যা মোটেই উচিত হয়নি। আমাদের উচিত সম্মিলিত ভাবে ছাত্রলীগকে শক্তি তাদের এটা মোটেও উচিত হয়নি। এখন সময় নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ‘আলী আকবর টিপু ১৯৯৭—৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।’
খুলনা জেলা সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপিত এবং সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মো. আবু হানিফ: গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খুলনা জেলা এবং মহানগর কমিটির নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। পরীক্ষিত আওয়ামী পরিবারের সন্তান , সাংগঠনিক ভাবে যোগ্য, দূরদর্শী এবং দু:সময়ে লড়াই করতে সক্ষম নেতৃত্বকে কমিটিতে স্থান দেয়া উচিত। এ ছাড়াও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সের দিকে নজর দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দ্বি—বার্ষিক সম্মেলন অনুসি্ঠত হয়। জেলা ও মহানগরে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাইছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ‘শেখ মো. আবু হানিফ ২০০০—২০০২ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ—সভাপতি, ২০০০—২০০২ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ২০০২—২০১১ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
খুলনা মহানগর যুবলীগ সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুর রহমান পলাশ বলেন: ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হয়ে এখন বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়েছে। নেতৃত্ব দিতে গেলে একদিকে সংগ্রামি এবং অন্যদিকে সৃজনশীল মানুষ হতে হবে। এই সময়ে প্রয়োগিক শক্তির অধিকারী নেতৃত্বে আসুক আমরা তাই চাই। আওয়ামী লীগের এই ১৫ বছরের রাষ্ট্র ক্ষমতার সময়ে কর্মীদের কষ্ট এবং সঙগ্রাম, বিপ্লব করতে হয়নি। আমাদের হাতে দেশ গঠনের অফুরন্ত সময় ছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সুশৃঙ্খলভাবে গঠন করেছেন। খুলনা মহানগর এবং জেলা ছাত্রলীগের কমিটির নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক চাই। হতে হবে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের অধিকারী। শফিকুর রহমান পলাশ এক সময় ইউনিয়ন, উপজেলা , খুলনা সিটি কলেজ পর্যায়ে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের মেম্বার, ১৯৯৯ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০৩ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। চলবে……….

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu