প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ খুলনার জনজীবন। মানুসসহ জীবজন্তু তীব্র তাপ প্রবাহে হাসফাস করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাচ্ছে তীব্র ও মাঝারি তাপপ্রবাহ। দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষদের অনেক কষ্টের মধ্য থেকে কাজ করতে হচ্ছে। ঘন বসতি এলাকা এবং আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পেয়ে খুশি। এদিকে, দেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় গত দুদিনে দেশের ও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল খুলনা বিভাগের সবকটি জেলাতেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। শনিবার খুলনার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার পরবর্তী তিন দিনের (৭২ ঘণ্টা) জন্য দেশে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শনিবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল স্কুল—কলেজ খুলবে। পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা ২৬ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। কাল রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ ছিল। কিন্তু দেশের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহের কারণে গতকাল শুক্রবার দেশজুড়ে তিন দিনের জন্য সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্টও জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর দাবি ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। খুলনাতে সরেজমিনে, নগরীতে তীব্র গরমে সবেচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষ। ফুটপাতের ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও গাড়িচালকদের সহ্য করতে হচ্ছে অসহ্য গরম। টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঘন বসতি এলাকার বাসিন্দারা। মানুষজন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। দিনমজুররা দুপুরের আগেই কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছেন। রিক্সা চালক ইদ্রিস আলী বলেন, একটানা অনেকক্ষণ রিক্সা চালাতে পারছি না। ১০—১৫ মিনিট রিক্সা চালালেই শরীর কাপছে। বার বার পানি পান করতেছি। একটা ট্রিপ দিয়ে ছায়ায় বসে থাকতে হচ্ছে। এই দুদিন ইনকাম কম হচ্ছে দিনের বেলা। সন্ধ্যার পর আবার রিক্সা নিয়ে রাত অব্দি থাকতে হচ্ছে। দিন মজুর সোলেমান গাজী বলেন, ৬—৭ ঘন্টার বেশী কাজ করা যাচ্ছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে। দুপুরের প্রায় ৩—৪ ঘন্টা ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। গাঁ ঘেমে ঠান্ডা গরমে অনেক শ্রমিকের ঠান্ডা গরম লেগে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সোনাডাঙ্গা মোড়ে যাত্রী আলামিন শেখ বলেন, সাতক্ষীরা থেকে খুলনায় এসেছি। আজকেই আবার সাতক্ষীরা ফিরবো। কিন্তু গরমের মধ্যে যে কষ্ট হয়েছে খুলনা আসতে, তাতে আর সাতক্ষীরা বাসে করে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। রোদ কমলে রওনা দিবো। সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, অনেক তাপ প্রবাহ। বিনা কাজে বের হচ্ছি না বাসা থেকে। তবে বাসায় থাকলেও লোড শেডিং হচ্ছে না বলে সুবিধা হচ্ছে। নিরালা এলাকার বাসিন্দা হাসিব হাসান বলেন, আমাদের বাসা দুই তলা। জল ছাদ দেয়া নেই। তাই বাসার মধ্যে একটু গরম। সন্ধ্যার দিকে বারান্দায় অথবা ছাদে যেয়ে বসতে হয়। সারাদিনের গরমের একটা প্রতিক্রিয়া সন্ধ্যার পরটের পাওয়া যায়। তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট কম হওয়াতে বিদ্যুৎ বিভাগকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খুলনা শিপইয়ার্ডের বাসিন্দা গালিব মাহমুদ বলেন, গরমে বার বার ভিজে যাচ্ছি। এতো তীব্র তাপে খুবই বাজে অবস্থা। এক তলা বাসা হওয়ার কারনে সারাদিন এসি চালিয়ে রাখলেও রুম ঠান্ডা হচ্ছে না। তবে এই তীব্র তাপ প্রবাহতে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। এজন্য একটু হলেও সস্তি অনুভব হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, এই তীব্র গরমে একটানা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ না করা ভালো। নইলে মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারেন। এছাড়া গরমে পানিশূন্যতা পূরণে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পানের পরামর্শ দেন তিনি। ওরাল স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া পানিতে লবন মিশিয়েও খাওয়া যাবে। তবে রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবু পানি, আখের জুস খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর, বাসি খাবারও পরিহার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি না করা ভালো। বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।