রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৩:৫১ অপরাহ্ন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দ্বিধায় বিএনপি

বিশেষ প্রতিবেদক:
  • প্রকাশিত সময় : শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৪৭ পড়েছেন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখনও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয় দলটির। দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদে এবার নির্বাচন হবে চার ধাপে। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ হবে। ৮ মে প্রথম ধাপে মোট ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ এপ্রিল। আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে একের পর এক পরাস্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরমধ্যে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে পাত্তা পায়নি বিএনপি। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে দলটি। এদিকে, দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় স্থানীয় সরকারব্যবস্থার এই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ঈদ ঘিরে নিজেদের মতো করে গণসংযোগ করছেন। গত তিন সপ্তাহে বিএনপির কোনো স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না দলটির নীতিনির্ধারকেরা। বিএনপিও এই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনও কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। দলের কাউকে নির্বাচনে যেতেও বলেনি, আবার না যেতেও বলেনি। যদিও দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার বক্তব্যে বলেছেন, কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। তবে, এ বিষয়ে বিএনপির নীতি—নির্ধারকেরা কেউ কিছু জানেন না বলে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূলে অনেক নেতা উপজেলা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। তারা চাচ্ছেন যাতে বহিষ্কারের খড়গে না পড়েন। ৯ মার্চ শেষ হওয়া কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার—প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা। কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া একটি বার্তা বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যুক্তি হিসেবে বিএনপির এক অংশ বলছেন, আওয়ামী লীগ নৌকা ছাড়া নির্বাচন করছে। সেজন্য প্রতিটি এলাকায় তাদের অনেক প্রার্থী থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির জনপ্রিয় নেতারা ভালো ফলাফল করতে পারবে। তারা বলছেন, সরকার বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলে অন্তত দুইশো উপজেলায় চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করার মতন ক্যাপাসিটি এখনো দলের রয়েছে। সম্প্রতি জামালপুরের বকশিগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে পৌর মেয়র নির্বাচত হয়েছেন বিএনপির দুই বহিষ্কৃত নেতা ফখরুজ্জামান মতিন ও আমিনুল ইসলাম সরকার। বৃহত্তর রংপুর বিভাগের এক জেলার সদস্য সচিব জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেউ অন্যান্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেবে, কেউ পেশাজীবী হয়ে যাবে। মূলত সবাই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। বিএনপির মূল শক্তি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী। তারা বিলীন হয়ে গেলে বিএনপিকে ভবিষ্যতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হবে। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, পুরো রমজানে সব মহানগর, জেলা, উপজেলাসহ একবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইফতার অনুষ্ঠান হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি এবং তাঁদের সক্রিয় করা গেছে। বিগত আন্দোলনে গুম, খুন এবং অঙ্গহানির শিকার নেতাকর্মীদের পরিবার ও স্বজনদের অর্থসহায়তা, ঈদসামগ্রীও দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচি স্থানীয় নির্বাচনের গণসংযোগের একটি অংশ বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে দলটির একটি অংশ আসন্ন উপজেলা নির্বাচন অংশ না নেওয়ার যুক্তি হিসেবে বলছেন, ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনই প্রমাণ করে দলীয় সরকার ও বর্তমান সিইসির অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। বরং নির্বাচনে অংশ না নিলে নেতাকর্মীরাও হামলা—মামলার মুখে পড়বে না। তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এই নির্বাচনের অংশ নিলে তাতে বিএনপির নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং সেটা সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে না। পুরো প্রশাসন আওয়ামীকরণ হয়ে আছে। প্রার্থী যারাই হোক না কেন নির্ধারিত ব্যক্তিরাই নির্বাচিত হবেন। তাদের নির্ধারিত নির্বাচনে ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সরদার হয়ে লাভ নেই। এ ব্যাপারে খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে না। এখন কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হলে দলের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয়। বিএনপি ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে স্থানীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর মধ্যে ২০২২ সালে বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কু নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দল থেকে তাদের বহিষ্কারের ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। তখন আপনারা জানতে পারবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যেহেতু ক্ষমতার পরিবর্তন হয় না, সরকারের কিছু আসে যায় না, আমরা সেই নির্বাচনে যেতেও চাই না। নির্বাচনে গেলে তো ২০১৪ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতাম। ১৮—তে গেলাম এই সরকারকে বিশ্বাস করে— আমাদের জবাই করে দিলো। এদের আর বিশ্বাস করা যায় না। তাদের কোনো পাতানো নির্বাচনেই আর যাবো না। আমরা গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য লড়াই করছি। সেই লড়াই চালিয়ে যাব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরনের আরো সংবাদ

Categories

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Hwowlljksf788wf-Iu